বরগুনা প্রতিবেদক ॥ বরগুনার আমতলী উপজেলায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত ৬’শ টাকার গ্যাসের সিলিন্ডার আমতলীতে বিক্রি হচ্ছে ৮’শ ৫০ টাকায়। অগ্নি নির্বাপক ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া লাইব্রেরী, চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান, মুদিমনোহরদি, ক্রোকারিজ ও ইলেকট্রনিক্স দোকানসহ গ্রামের যত্রতত্র স্থানে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস। এতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে আমতলী। যে কোন সময় আমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত যত্রতত্র স্থানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় চারজন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ডিলার রয়েছেন। ওই চারজন ছাড়া উপজেলা শহরের লাইব্রেরী, চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান, মুহিমনোহরদি, ক্রোকারিজ ও ইলেকট্রনিক্স দোকানসহ গ্রামের যত্রতত্র শতাধিক স্থানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। ওই সকল দোকানগুলোতে গ্যাস বিক্রির সরকারী কোন অনুমোদন নেই। নেই অগ্নিনির্বাপক ও বিস্ফোরক লাইসেন্স। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যত্রতত্র স্থানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করছেন না ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা। তারা ইচ্ছামাফিক গ্যাস বিক্রি করছেন। সরকার নির্ধারিত সাড়ে ১২ কেজি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য ৬’শ টাকা। ওই এলপি গ্যাস বিভিন্ন কোম্পানীর ডিলাররা ৭’শ থেকে ৭’শ ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। লাইসেন্সবিহীন খুচরা বিক্রেতারা ওই গ্যাস ৮’শ থেকে ৮’শ ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
শনিবার আমতলী উপজেলা শহরের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখাগেছে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে না। আমতলীর দোকানগুলোতে লাফস, জি-গ্যাস, ফ্রেস, টোটাল, নাভানা, জেএমআই, সেনা কল্যাণ, বেক্সিমকো, ওমেরা, ওরিয়ন ও বিএম কোম্পানীর গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। ওই গ্যাসের সিলিন্ডার খুচরা বিক্রেতারা ৮’শ থেকে ৮’শ ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
বেশী দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ডিলারদের কাছ থেকে বেশী দামে ক্রয় করি আবার বেশী দামে বিক্রি করছি। সরকার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম কমালেও ডিলাররা দাম কমাচ্ছেন না। তাতে আমাদের দোষ কোথায়? এদিকে ডিলাররা বলেন, কোম্পানীর কাছ থেকে বেশী দামে ক্রয় করি আবার বেশী দামে বিক্রি করছি। সরকার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম কমালেও কোম্পানীতো কমাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, আমতলীতে বসুন্ধরা কোম্পানীর গ্যাস সিলিন্ডারের ডিলার মোঃ মহিউদ্দিন, লাফ্স জি-গ্যাস, ফ্রেস ও নাভানা কোম্পানীর ডিলার আনিচুর রহমান বাচ্চু, সেনা কল্যাণ ও বেক্সিমকো কোম্পানীর ডিলার মোঃ রেজাউল কবির ও টোটাল ও জেএম আই কোম্পানীর ডিলার জব্বার সিকদার। এ চারজন ডিলার ছাড়াও অগ্নি নির্বাপক ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া উপজেলায় দু’শতাধিক বিভিন্ন দোকানে গ্যাস ডিলিন্ডার বিক্রি করছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য তালিকা নির্ধারণ করে দেয়। ওই তালিকায় দেয়া আছে ১২.৫ কেজির প্রতি গ্যাস সিলিন্ডার ৬’শ টাকা মূল্যে বিক্রি হবে।
গ্যাস ক্রেতা মোঃ মাঈনুল ইসলাম রাজু বলেন, টোটাল কোম্পানীর গ্যাস ৮’শ টাকায় ক্রয় করেছি। তিনি আরো বলেন, সরকার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমালেও আমতলীর গ্যাস বিক্রেতারা দাম কমাচ্ছেন না। খুচরা বিক্রেতা মোঃ কবির গাজী বলেন, নাভানা, ফ্রেস, লাফস ও টোটাল গ্যাসের সিলিন্ডার ৮’শ এবং বেক্সিমকো গ্যাসের সিলিন্ডার ৮’শ ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। বেশী দামে ডিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করি আবার বেশী দামে বিক্রি করছি। আমতলীর সচেতন নাগরিক মোঃ আনোয়ারুল কবির বলেন, রাস্তা জুড়ে ও যত্রযত্র স্থানে গ্যাস বিক্রি করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও অন্যায়। দ্রুত যত্রতত্র স্থানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধের দাবী জানাই।
আমতলী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ তামিম হাওলাদার বলেন, গ্যাসের ডিলারদের অগ্নিনির্বাপক লাইসেন্স দেয়া আছে। কিন্তু লাইব্রেরী, চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান, মুহিমনোহরি ও ক্রোকারিজের দোকানে গ্যাস বিক্রির জন্য কোন অগ্নিনির্বাপক লাইসেন্স দেয়া হয়নি। এ সকল দোকানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করা বে-আইনি এবং ঝুঁকিপূর্ণ। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, যত্রতত্র স্থানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করা যাবে না। অবৈধভাবে যারা গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply